শিরোনাম: |
গাউসে পাকের জীবন ও কর্মঃ
শাহ্জাহান মোহাম্মদ ইসমাঈল
|
হজরত গাউসুল আযম কেবলমাত্র একজন শীর্ষস্থানীয় সুফী সাধকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে আইনজ্ঞ, শাস্ত্রবিদ,ধর্মবেত্তা, দার্শনিক, অসাধারন বাগ্মী ও সুসাহিত্যিক। সৈয়্যদ আমীর আলী বলেন “মুসলিম সুফীরা অনেক তরীকায় বিভক্ত ছিলেন । ইসলামী জ্ঞানকোষে একশতের ও বেশী সূফী তরীকার একখানা তালিকা প্রনয়ন করা হয়েছে। পশ্চিমেও অনেক দরবেশী তরীকা উদ্ভূত হয়েছিল। সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ তরীকাগুলির অন্যতম ও সম্ভবতঃ সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী তরীকা হল কাদেরিয়া তরীকা ।এই তরীকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রখ্যাত সূফী সাধক শায়খ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)। হজরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) হযরত আলীর (কঃ) বংশধর ছিলেন। ভারতের সুন্নী সম্প্রদায়ের সুফীগণ তাঁকে অতিশয় সম্মানের চোখে দেখে থাকেন। তিনি সাধারণতঃ ‘গাওসুল আযম’ নামে পরিচিত।” দি স্পিরিট অব ইসলাম। “লে কনফ্রেরীজ রিলিজিয়াসেস মুসলমানস”প্রথম খন্ড গ্রন্থের রচয়িতার মতে, “প্রাচ্যে কাদেরিয়া তরীকার ব্যাপক প্রভাব বিদ্যামান । জাভা ও চীন পর্যন্ত বিস্তৃত আর আনকারা, মক্কা ও মদীনাতেও প্রতিষ্ঠিত । আল্লাহর সেবায় আত্মসংযম, তম্ময় মরমী ভাব, জাতি-ধর্ম-মত নির্বিশেষে বিশ্বপ্রেম বিষয়ক নীতি সমুহের সর্বোচ্চ বিকাশ, অতিশয় দানশীলতা, সর্বাবিধ কাজে ধর্মনিষ্ঠ বিনয় এবং আত্মশক্তির কোমলতা তাঁকে ইসলামের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত তাপসে পরিণত করছে”। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি বড়পীর নামেই সর্বত্র সবিশেষ পরিচিত। বাংলাদেশে তাঁর নাম শোনেনি এমন লোক পাওয়া খুবই দুস্কর।তাঁর পবিত্র নামানুসারে প্রবর্তিত ‘কাদেরিয়া তরীকা’ শায়খ হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) জীবদ্দশাতেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তাঁর ওফাতের পর তাঁর শিষ্য ও খলীফাদের দ্বারা এ তরীকা সারা মুসলিম জাহানে বিস্তৃত। হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাকে’র (রহঃ) মাতৃ ও পিতৃ বংশীয় শাজারা : হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাকে’র (রহঃ) পিতৃবংশীয় শাজারা : হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাকে’র (রহঃ) মাতৃবংশীয় শাজারা : ১। হযরত বিবি ফাতিমা (রাদিঃ) হযরত আলী (রাদিঃ) ২। হযরত হাসান (রাদিঃ) হযরত হোসাঈন (রাদিঃ) ৩। হযরত আবদুল্লাহ মহজ (রহঃ) হযরত জয়নুল আবিদিন (রহঃ) ৪। হযরত মুসা আল জুন (রহঃ) হযরত ইমাম বাকির (রহঃ) ৫। হযরত আবদুল্লাহ সালেহ (রহঃ) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (রহঃ) ৬। হযরত মুসা সানী (রহঃ) হযরত ইমাম মুসা আল কাযিম (রহঃ) ৭। হযরত আবু বকর দাউদ (রহঃ) হযরত ইমাম আলী আর রিযা (রহঃ) ৮। হযরত শামসুদ্দিন যাকারিয়া (রহঃ) হযরত আবু আলাউদ্দিন মুহাম্মদ আলজাওয়াদ (রহঃ) ৯। হযরত ইয়াহয়া জাহিদ (রহঃ) হযরত কামালউদ্দিন ঈসা (রহঃ) ১০। হযরত আবদুল্লাহ জীলী (রহঃ) হযরত আবুল আতা আবদুল্লাহ (রহঃ) ১১। হযরত আবু সালেহ মুসা জঙ্গী (রহঃ) হযরত মাহমুদ (রহঃ) ১২। হযরত মুহাম্মদ (রহঃ) ১৩। হযরত আবু জামাল (রহঃ) ১৪। হযরত আবদুল্লাহ সওমেয়ী (রহঃ) ১৫। হযরত বিবি উমমুল খায়ির ফাতিমা (রহঃ) জন্ম ও বংশ পরিচিতিঃ ৪৭১ হিজরী সনের ১লা রমজান / ১০৭৭ খৃঃ কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিন দিকে অবস্থিত জীলান বা গীলান অঞ্চলের ‘নীফ’ নামক স্থানে বড়পীর হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)জন্মগ্রহন করেন। বস্তুতঃ তাঁর সমগ্র জীবন ছিল মহান রাব্বুল আলামীনের অসীম কুদরতের প্রকাশস্থল । তাই শুভ জন্মের প্রথম প্রহর থেকেই এ সদ্যোজাত শিশুটিকে টানা একমাস রোযা রাখতে দেখা যায়। মাতৃগর্ভ থেকেই তিনি ছিলেন ১৮ পারা কুরআনের হাফেজ। হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাকের (রাহঃ আঃ) মাতৃ ও পিতৃ বংশীয়পবিত্র বংশ লতিকার দু’টি ধারাই নরনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নুরানী বংশধারার সাথে সংযুক্ত। মায়ের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন হযরত সায়্যিদিনা ইমাম হোসাইন (রাঃ আঃ) এর বংশধর। আর পিতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন হযরত সায়্যিদিনা ইমাম হাসান (রাঃ আঃ) এর বংশধর। তাই এক অতি পবিত্র শোণিত ধারার উত্তরাধিকার নিয়েই জন্মেছিলেন হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাক(রহঃ)। তাঁর পূণ্যশীলা মায়ের নাম ছিল হযরত বিবি উম্মুল খায়ির ফাতিমা (রহঃ)। তাঁর নানাজান হযরত আবদুল্লাহ সওমেয়ী (রহঃ) ছিলেন সেকালের একজন বিশিষ্ট অলী আল্লাহ্। তাঁর মহাত্মা পিতা হযরত আবু সালেহ মুসা জঙ্গী (রহঃ) ছিলেন একজন অতি উচুঁদরের অলী আল্লাহ। প্রাথমিক শিক্ষাঃ নিতান্ত বালক বয়সেই এতিম হয়ে পিতার স্নেহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তিনি। ঠাই হলো তাঁর বয়োবৃদ্ধ নানার সংসারে। আর বুযুর্গ নানার প্রত্যক্ষ তদারকীতে গ্রামের পাঠশালাতেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার পর্ব শুরু হয়। প্রথম যেদিন তিনি মক্তবে যান সেদিন সেখানে ছিল শিক্ষার্থীদের প্রচন্ড ভীড়। তখন মক্তবের ছাত্ররা “আল্লাহ্র অলীর জন্য বসার জায়গা করে দাও” এই গায়েবী আওয়াজ শুনতে পায়। তখন উপস্থিত ছাত্ররা তাঁর বসার জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়। মক্তবের ওস্তাদজী যখন তাঁকে বিসমিল্লাহ্-র সবক দিলেন তখনই ঘটে গেল এক অবাক কান্ড। ওস্তাদজীকে একাধারে তিনি বিসমিল্লাহ্ থেকে শুরু করে আঠার পারা পর্যন্ত মুখস্থ শুনিয়ে দিয়ে থেমে গেলেন। বিস্ময়ে হতবাক ওস্তাদজী তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, বাছা এগুলো তুমি কোথা থেকে শিখেছ ? তিনি উত্তরে যা বললেন তাতো আরো বিস্ময়কর। তিনি বল্লেন, “হুজুর আমি মায়ের পেটে থাকতে আমার মা প্রতিদিন কুরআন শরীফ তিলাওয়াৎ করতেন। আমি আমার মায়ের কুরআন শরীফ তিলাওয়াৎ শুনে শুনে তা মুখস্থ করে নিয়েছি”। এভাবে একদিন শেষ হলো তাঁর মক্তবে পড়াশোনার পাঠ। এবার তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটলেন রাজধানী বাগদাদ নগরীরব দিকে। উচ্চ শিক্ষার্থে বাগদাদ গমনঃ ৫৮৮ হিজরীতে তিনি যখন অষ্টাদশ বর্ষীয় যুবক তখন জিলান হতে উচ্চ শিক্ষার্থে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী বাগদাদে গমন করেন। পথিমধ্যে ডাকাত দল কর্তৃক আক্রান্ত হওয়া এবং তাঁর অসাধারন সত্যবাদীতা ও মাতৃভক্তির পারাকাষ্ঠায় মুগ্ধ তস্করদের সদলবলে দস্যুবৃত্তি ত্যাগের ঘটনাতো বিশ্বখ্যাত। শুরু হলো জ্ঞান সাধনাঃ জ্ঞান পিপাসা মিটাতে বাগদাদের সুবিখ্যাত জ্ঞানী ও গুনী ব্যক্তিদের সাহচার্যে এসে শুরু করলেন জ্ঞান সাধনা। প্রথমেই শায়েখ হাফেজ আবু তালেব বিন ইউসুফের তত্বাবধানে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ভালভাবে হিফজ করে নিলেন। বহু খ্যাতনামা বিদ্বৎজ্জনের সান্নিধ্যে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের তেরটি শাখায় অসাধারন পান্ডিত্য অর্জন করেন। এলমে কেরাত, তাফসীর, হাদীস, আকাঈদ, এলমে কালাম, এলমে ফিরাসাত (মনোবিজ্ঞান),তারিখ (ইতিহাস), এলমে আনসাব (বংশ বিদ্যা), এলমে লুগাত (অভিধান শা¯),আদব (সাহিত্য), এলমে উরূজ (ছন্দ বিদ্যা), এলমে নাহু (ব্যাকরণ শাস্ত্র), এলমে মুনাজিরা (তর্কবিদ্যা), প্রভৃতি বিষয়ে তিনি সুগভীর বিদ্যাবত্তা অর্জন করেছিলেন। হাম্বলী মাজহাবের তিনি ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় পন্ডিত। এভাবে অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টের মধ্যে কেটে গেল একে একে তাঁর নয়টি বছর। শেষ হলো জ্ঞান সাধনা। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সমানতালে চলতে লাগলো তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা। তরীকতের দীক্ষা গ্রহণঃ তরীকতের পথ খুবই বন্ধুর ও সমস্যা সংকুল। প্রতি পদে পদে এতে রয়েছে সমুহ বিপদের সম্ভাবনা। আরো আছে চিরশত্রু শয়তানের পাতা ফাঁদে পড়ে ঈমানচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হবার আশংকা। তাই একাকী এ পথে চলা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর এটা সমীচিনও নয়। ডাক্তারী শাস্ত্র আয়ত্ব করার জন্য যেমন কেবলমাত্র পুঁগিগত বিদ্যা লাভই যথেষ্ট নয় বরং একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করাও অত্যাবশ্যকীয়। একজন শিক্ষাগুরুর পথ নির্দেশও তাই এপথে চলার জন্য একান্ত অপরিহার্য্য। বাগদাদ নগরীর মুজাফফরিয়া মহল্লায় বাস করেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) । সহজ সরল অনাড়ম্বর তাঁর জীবন যাত্রা। আঙ্গুর ও খেজুরের রস বিক্রি করা তাঁর পেশা। তাই মানুষ তাঁকে দাব্বাস বলে ডাকে। দাব্বাস শব্দের অর্থ রস বিক্রেতা। এই মহান বুজুর্গের রসে কোনাদিনই মাছি বসেনা। সামান্য কীটপতঙ্গও বোঝে আল্লাহ্-র অলীর মর্য্যাদা। বোঝে না শুধু মানুষ। সিরিয়ার রাহবা গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বাগদাদে আসার পর আর কখনও ফিরে যাননি স্বীয় জন্মভূমিতে এ মহান দরবেশ। বেছে নিয়েছেন তালেবে মাওলাগণকে সঠিক পথে পরিচালিত করার মহান দায়ীত্ব। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পীর বুজর্গগন তাঁরই সাগরীদ। যুগের কর্ণধার এই মহান সাধকের নিকটই তরীকতের প্রাথমিক দীক্ষা নিলেন তর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)। আত্মনিয়োগ করলেন কঠিন আধ্যাত্মিক সাধনায়। প্রথম দর্শনেই নবাগত সদস্যের অতি উজ্জল ভবিষ্যতের বিষয়ে জানতে পারলেন শায়খ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ)। আল্লাহ্র অশেষ রহমতের চির জ্যোর্তিময় বলয় সদা পরিবেষ্টন করে আছে তাঁর এ নতুন শিষ্যকে। সময় তাঁর জন্য অপেক্ষমান। সে সময় সন্নিকটে যখন এ অনারব যুবক অভিসিক্ত হবেন সমস্ত গাউসদের নেতা বা ‘গাউসুল আযম’রূপে। একদিন তামাম শিষ্যদের ভরা মজলিসে তিনি বলেই ফেললেন সেকথা। তিনি বল্লেন,“সেই সময় সমাগত প্রায়, যখন দুনিয়ার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণের গর্দানে থাকবে তাঁর কদম। এই অনারব ব্যক্তির মুখে এক সময় উচ্চারিত হবে একথা, আমার কদম সকল অলি আল্লাহ্গণের স্কন্ধে” তাঁর এই ঘোষনার সময় তখনকার সমস্ত অলি আল্লাহ্গণ তাঁর কদমের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘাড় নত করে দেবে। মহান সাধক শায়েখ হাম্মাদ বিন মুসলিম দাব্বাস (রহঃ) এর সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন কাটিয়ে সাধনা পথের সুকঠিন ও বিপদসংকুল বাঁকগুলো একে একে পার হয়ে গেলেন তিনি। কঠিন রিয়াজত ও মুশাহিদার মাধ্যমে তরীকতের সুকঠিন পথ পাড়ি দেবার মত শক্তি ও সাহস সঞ্চার হলো তাঁর নিজের মধ্যে। এবার শুধুই এগিয়ে চলার পালা। যে বাজ পাখী দুর আকাশে উড়ে বেড়াবার জন্যই জন্ম নিয়েছে তাকে কী করে খাঁচায় আটকাবেন শায়খ হাম্মাদ ? কিন্তু তিনি যে তাঁকে নির্বিঘ্নে নিঃসীম নীলাকাশে রাজত্ব করার মত একটা শক্ত ভিত তৈরী করে দিতে পেরেছেন সেটাইবা কম কীসে ? প্রভুর প্রেম ও মারিফাতের প্রচন্ড নেশায় পেয়ে বসেছে তরূণ আবদুল কাদের জিলানীকে (রহঃ) । দয়াময় প্রভুর মিলন সুধা আকন্ঠ পান না করে যেন কিছতেই নিস্তার নেই তাঁর। অতি উচ্চাশা মনে নিয়ে দুরু দুরু বুকে এবার তিনি গিয়ে হাজির হলেন যুগশ্রেষ্ট তাপস শায়খ হযরত আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী (রহঃ) এর নিকট। তাঁকে মুরীদ করে নিলেন এ সাধক প্রবর। তাঁর মনের আশা পূরণের পথও বাতলে দিলেন তিনি। এভাবে দিন-রাত কঠোর তপস্যা ও রিয়াজত-মুশাহিদা-মুজাহিদার মধ্য দিয়ে কেটে গেল তাঁর আরো পঁচিশটি বছর। সার্থক হলো তাঁর রিয়াজত, আর পরিপর্ণতা পেলো তাঁর কঠোর সাধনা। উপমহাদেশের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস শায়খ আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) তাঁর সুবিখ্যাত “গাউসুল ওয়ারা” নামক জীবনী গ্রন্থের ২৪ পৃষ্টায় বলেন, অন্তিম সময়ে হজরত গাউসে পাক (রহঃ) তাঁর স্বলিখিত মকতুবাতে লিখেন, “আমি এমন এক সাগরে ডুব দিয়েছি যার উপকুলে আম্বিয়াগনেরও দাঁড়াবার সৌভাগ্য হয়নি”। তবে এর অর্থ এটা নয় যে তিনি আম্বিয়াগনের চেয়েও বেশী মর্য্যাদাবান ছিলেন। বস্তুতঃ এটা ছিল তাঁর প্রতি আল্লাহ্তায়ালার এক খাস মেহেরবানী স্বরূপ। হযরত সায়্যিদিনা গাউসে পাকের (রহঃ) পীরানে তরীকতের শাজারা : ১) শেরে খোদা হযরত সায়্যিদিনা মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃআঃ) ৬০০-৬৬২খৃঃ/ওফাত-৪০হিজরী) ২) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম হোসাইন (রাঃআঃ) জন্ম-৫ই শাবান ৪র্থ হিঃ-ওফাত-১০ই মুহররম,৬১ হিজরী ৬২৬-৬৮০খৃঃ। ৩) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম জয়নুল আবেদীন (রহঃ) জন্ম-৩৬ হিজরী-ওফাত-১৮ই মুহররম,৯৪ হিজরী ৬৫৮-৭১৬খৃঃ। ৪) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম বাকের (রহঃ) জন্ম-৫৭ হিজরী-ওফাত-৭ই জিলহজ্ব,১১৩ হিজরী/ ৬৭৬-৭৩১খৃঃ । ৫) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) জন্ম-৮০ হিঃ ওফাত-১৫ই রজব,১৪৮ হিঃ/৬৯৭-৭৬৫খৃঃ। ৬)হযরত সায়্যিদিনা ইমাম মুসা আল কাজিম (রহঃ) জন্ম-১২৯ হিঃ ওফাত-২৫ রজব,১৮৩ হিঃ/৭৪৬-৭৯৯খৃঃ। ৭) হযরত সায়্যিদিনা ইমাম আলী আর রিযা (রহঃ) জন্ম- ১৫৩ হিজরী ওফাত-২রা মুহররম,২০২ হিজরী /৭৭০-৮১৭খৃঃ। ৮)হযরত সায়্যিদিনা মারুফ আল কারখী (রহঃ) ওফাত- ২০০হিঃ/৮১৬খৃঃ ৯) হযরত সায়্যিদিনা সিররি ঊস সাকতী (রহঃ) ওফাত-৮৬৭ হিজরী ১০) হযরত সায়্যিদিনা জুনাঈদ বাগদাদী (রহঃ) ওফাত- ২৭ই রজব- ২২৮-২৯৮ হিজরী/৮৫০-৯২০খৃঃ ১১) হযরত সায়্যিদিনা আবু বকর শিবলী (রহঃ) ওফাত- ১৭ই জিলহজ্ব, ৩৩৫ হিজরী। ১২)হযরত সায়্যিদিনা আবদুল ওয়াহেদ তামিমী (রহঃ) ১৩) হযরত সায়্যিদিনা আবুল ফারাহ তারতুসী (রহঃ) ১৪) হযরত সায়্যিদিনা আবুল হাসান আলী আল হানকারী (রহঃ) ১৫) হযরত সায়্যিদিনা আবু সাইদ মোবারক মাখযুমী (রহঃ) ওফাত- ৫১৩ হিজরী। মুহিউদ্দিন খেতাব লাভঃ ৫১১ হিজরীর কোন শুক্রবারের শুভক্ষণে হযরত গাউসে পাককে (রহঃ) আল্লাহ্-র পক্ষ থেকে ‘মুহিউদ্দিন’ বা ‘ধর্মের পনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে ভূষিত করা হলো। আধ্যাাত্মিক সাধনায় পেলেন পর্ণতার স্বীকৃতি। পরিগনিত হলেন অলিকূল শিরোমনি হিসেবে। তিনি যা–িছলেন মসজিদের দিকে। দেখতে পেলেন রা¯ায় শয্যাশায়ী অসুস্থ্য মৃতপ্রায় এক বয়োবৃদ্ধ লোক তাঁর কাছে সাহায্য চাইছে। তিনি তাঁকে হাত দিয়ে ধরে যেইনা উঠাতে গেলেন অমনি ঐ ব্যক্তি সুস্থ্য সবল এক যুবকে পরিণত হলো। তিনি অবাক বিস্ময়ে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলেন,“কে তুমি ?” উত্তর এলো “আমি নুরনবীর প্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম। আপনার পবিত্র করস্তর্শ্বে আল্লাহ পাক্ আমাকে নুতন জীবন দান করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। আজ থেকে আপনি এ জগতে ‘মুহিউদ্দিন’ নামে পরিচিত হবেন। একথা বলেই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল”। বড়পীর হযরত গাউসে পাক (রহঃ) এর নাম ও খেতাব সমুহ ঃহযরত শায়খ আবদুল কাদির জিলানীর (রহঃ) অনেকগুলি খেতাব ছিল । সর্ব প্রধান খেতাব হলো ’পীরানে পীর‘ (পীরদের সর্দার) ‘পীরে দ¯তগীর’ (সাহায্যকারী পীর), ‘মাহবুবে সুবহানী’ (পবিত্র আল্লাহর প্রেমিক), ‘গাউসুল আযম’ (মহান আশ্রয়স্থল) ‘মুহিউদ্দিন’ (ধর্মের পুনঃজীবনদাকারী) ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণতঃ তিনি “হযরত বড় পীর সাহেব” নামেই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর ভক্তগণ সব সময় তাঁকে ‘দরবেশদের সুলতানর¿পে’ অভিহিত করে থাকেন এবং মুশাহিদুল্লাহ, আমর¿ল্লাহ, ফাদলুল্লাহ, আমানুল্লাহ, নুর¿ল্লাহ, কুতুবুল্লাহ, সাইফুল্লাহ, ফরমানুল্লাহ, বুরহানুল্লাহ, সিবগাতুল্লাহ প্রভৃতি বিশেষণে বিভূষিত করে থাকেন। এছাড়া জমীনের মধ্যে তাঁর উপাধি ‘মুহিউদ্দিন’ আর আসমানে তিনি ‘বাজে আশহাব’ নামে পরিচিত। হযরত গাউসে পাকের (রাহঃ আঃ) অনেকগুলি বরকতময় নাম রয়েছে। তার মধ্যে নীচের এগারোটি নাম অজিফা হিসেবে পঠিত হয়ে থাকেঃ ১। সৈয়্যদ মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ২। শেখ মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৩। সুলতান মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৪। ওলী মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৫। বাদশাহ মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৬। মাখদুম মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৭। মাওলানা মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৮। খাজা মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ৯। মাহবুব মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ১০। কুতুব মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী ১১। গাউস মুহিউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী । এ রকম তাঁর ৯৯টি উপাধির কথা জানা যায়। এছাড়া উনবিংশ শতকের বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রহঃ ) কর্তৃক ৩০ খন্ডে রচিত বিশ্ব বিশ্রুত অদ্বিতীয় দরূদ শরীফের সংকলন ‘মজমুয়ায়ে সালাওয়াতির রাসুল’ শীর্ষক গ্রন্থের ৩০তম খন্ডে এবং “মুজহেরে জামালে মু¯ফায়ী” গ্রন্থে তাঁর শতাধিক নাম উল্লিখিত হয়েছে। বাবুল আযিয মাদ্রাসায় অধ্যাপনাঃ৫১৩ হিজরীতে তদীয় পীর ও মুর্শীদ শায়খ আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী (রহঃ) এর ইন্তেকাল হলে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বাবুল আযাজ মাদ্রাসা পরিচালনার গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। আমৃত্যু নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন তিনি এ মহান দায়িত্বভার। রেখেছেন শিক্ষাগুরুর বিশ্বাসের মর্যাদা। সংসার জীবনে প্রবেশঃ ইবাদাত বন্দেগীতে ব্যাঘাত ঘটার আশংকায় হযরত গাউসে পাক (রহঃ) কখনেই সংসারের ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাননি। কিন্তু ৫২১ হিজরীতে স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্বপ্নযোগে দেখা দিয়ে নির্দেশ দিলেন বিয়ে করার জন্য। কী আর করা ? সাথে সাথে নবীজীর সুন্নত পালনে তৎপর হলেন তিনি। বিবাহ করে ঘরে এনে তুললেন সদ্বংশীয়া সৈয়্যদজাদী সুশীলা এক রমণীকে। শুরু হলো তাঁর জীবনের আরেক নতুন অধ্যায় যার নাম - সংসার জীবন। একে একে চারজন রমণীর পাণি গ্রহন করেছিলেন তিনি। আল্লাহ্পাক তাঁকে মোট ৪৯ জন সন্তান-সন্ততি দান করেছিলেন। তাঁর পুত্রের সংখ্যা ছিল ২০ জন। এঁরাও ছিলেন তাঁদের পিতার মতই জ্ঞানী ও নেক স্বভাব সম্পন্ন। ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা প্রদানঃ ঐ একই বছর নুর নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরেকটি স্বপ্নাদেশ পেলেন হযরত গাউসে পাক (রহঃ)। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে এবার নির্দেশ দিলেন প্রকাশ্য ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় উম্মতগণকে হিদায়াত ও নসীহতের বাণী শোনাবার জন্য। তিনি নিজে অনারব ছিলেন বিধায় জনসমক্ষে প্রকাশ্যভাবে ওয়াজ নসীহত করার সাহস পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। এবার নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বপ্নে তাঁর মুখে পবিত্র থুথ মুবারক লাগিয়ে দিয়ে বক্তৃতা করার জন্য অভয় বাণী শোনালেন। নুর নবীজীর অসাধারন বরকতময় থুথুর প্রভাবে তাঁর মধ্যে ফিরে এলো আত্মবিশ্বাস ও জনসভায় বক্তৃতা করার প্রেরণা। তিনি শুরু করলেন প্রকাশ্য ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে গোমরাহীর অন্ধকারে নিমজ্জিত দিশেহারা উম্মতে মুহাম্মদীকে হিদায়াত ও নসীহতের বাণী শোনাবার কাজ। এভাবে একটানা পরবর্তী চল্লিশ বছর ধরে চললো ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে তাঁর হিদায়াত ও দাওয়াতী কর্মকান্ড। এলো সেই যুগান্তকারী মহা ঘোষনাঃ প্রকাশ্য ওয়াজ মাহফিলে একদিন হযরত গাউসে পাকে’র (রহঃ) পবিত্র মুখে উচ্চারিত হলো অভাবনীয় এক কথা। তিনি বলে বসলেন,“কাদ্বামী হাযিহি আলা রাকাবাতি কুল্লি ওয়ালীয়ে আল্লাহ্” অর্থাৎ আমার চরণ সকল অলী আল্লাহর স্কন্ধোপরি। অবাক বিস্ময়ে হতবাক তাঁর সম্মুখের বিশাল জনসমুদ্র। তখন শুধু সে সময়ের অলী আল্লাহগণই নয় বরং গাউসে পাকের পর্ববর্তী সময়ের যে সকল অলী আল্লাহগণ দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছিলেন তাঁরা নিজ নিজ কবর থেকে এবং যেসব অলী আল্লাহ তখনও পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেননি এবং কিয়ামত পর্যš যারা অলী হিসেবে দুনিয়াতে তাশরীফ আনবেন তাঁরাও রূহজগত থেকে নিজ নিজ গর্দান ঝুকিয়ে দিয়েছিলেন উক্ত রূহানী নির্দেশের প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ। রূহানী জগতের এ নির্দেশ শুনা মাত্রই পৃথিবীর সকল অলী আল্লাহ্গণ সসম্ভ্রমে একযোগে বলে উঠলেন, “সাদ্দাকনা ওয়া আমান্না”। অর্থাৎ আমরা মেনে নি–িছ ; আপনি সত্যই বলেছেন। শুধু তাই নয় গাউসুল আযমের (রহঃ) এ ঘোষনা কসিদায়ে গাউসিয়াতেও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন,“আনাল হাসনী ওয়াল মাজদাআ মাকামী, ওয়া আকদামী আলা উনুকীর রিজালী” অর্থাৎ-বংশে আমি হাসানী যে, আবাস আমার মাজদাআয়, সর্বজনের স্কন্ধোপরি আমার চরণ শোভা পায়। সর্বপ্রথম যিনি নত শিরে এ ঘোষনা কবুল করেছিলেন তিনি হলেন তরীকত জগতের উজ্জল নক্ষত্র হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহঃ)। গরীবে নওয়াজ হযরত খাজা আজমিরী (রহঃ), এ ঘোষনা শোনা মাত্রই বলে উঠলেন,“কদমুকা আলা আইনি ওয়া রায়াসী” অর্থাৎ - আপনার কদম মুবারক আমার দু’চোখ ও মাথার উপর। হযরত শায়খ কুতুব (রহঃ) বলেন, “গাউসে পাকের (রহঃ) উপরোক্ত ঘোষনার সাথে সাথে মক্কা-মদীনা শরীফের ১৭ জন, ইরাকে ৬০ জন, এডেনে ৪০ জন, সিরিয়াতে ৩০ জন, মিশরে ২০ জন, পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্যান্য দেশে ২৭ জন, পর্বাঞ্চলীয় দেশসমুহে ২৩ জন,আবিসিনিয়াতে ১১ জন, ইয়াজুজ-মাজুজের এলাকাতে ১৭ জন, লংকাতে ১৭ জন, কোহেকাফে ৪০ জন এবং বাহরে মুহীতে ৪০ জন এভাবে বিশ্বব্যাপী তৎকালীন মোট ৩১৩ জন অলী আল্লাহ গাউসুল আযমের (রহঃ) এ ঘোষনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। হজরত শায়খ মুকাররম (রহঃ) ইরশাদ করেন, আমি আল্লাহ্ পাককে হাজির নাজির জেনে বলছি, “যে দিন হুজুর গাউসে পাক (রহঃ)‘আমার চরণ সকল অলী আল্লাহ্দের কাঁধের উপর’ এ মহান ঘোষনা উচ্চারণে করেছিলেন, সে দিন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আউলিয়ায়ে কিরামগন দেখতে পেয়েছিলেন যে, কুতুবিয়াতের পতাকা তাঁর সামনে প্রোথিত করা হয়েছে। আর গাউসিয়তের মুকুট তাঁর পবিত্র মস্তকের শোভা বর্ধন করছে”। হজরত শায়খ আবু লুলু আরমানী (রহঃ) বর্ণনা করেন,“ সেদিন একটা বিশাল জমায়েত শূন্যাকাশে উড়ন্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। হজরত খিজির (আঃ) ঐ জমায়েতকে গাউসে পাকের (রহঃ) দরবারে হাজির হবার নির্দেশ দিচ্ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র নিজের যুগের জন্যই নন বরং তাঁর পূর্বাপর সকল যুগের জন্যই গাউসুল আযম হিসেবে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। কসিদায়ে গাউসিয়ায় তাঁর এ চিরন্তন ক্ষমতার পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন,“ওয়া ওয়াল্লানী আলাল আকতাবে জাময়ান,ফাহুকমী নাফিজুন ফি কুল্লি হালী” অর্থাৎ - আমাকে জামানার সকল কুতুবদের উপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে এবং আমার আদেশ সর্বকালে জারী থাকবে। জন্মের পূর্বেই তাঁর জন্য এ গৌরবময় আসন স্থির ছিল মর্মে কসিদায়ে গাউসিয়ার এক পংক্তিতে বলা হয়েছে -“বিলাদুল্লাহি মুলকি তাহতা হুকমী, ওয়া ওয়াক্তী কাবলা কাবলী কাদ সাফালী” অর্থাৎ -আল্লাহ্-র রাজ্য আমার রাজত্ব, আমার আদেশের অধীন এবং আমার জন্মের বহু পর্বেই আমার জন্য শ্রেষ্ট মর্য্যাদার এ আসন স্থির করা ছিল। এ কারনেই দেখা যায় হযরত সায়্যিদিনা গাউসুল আযমের (রহঃ) জন্মের তিনশত বছর পর্বের বিশিষ্ট সাধক পুরুষ হযরত আবু ইয়াজিদ তাইফুর ওরফে বায়েজিদ বোস্তামী (রহঃ) (ওফাত-১৩৪হিজরী) একদা স্বীয় মুরীদানদের সাথে আলাপরত অবস্থায় নিজের মাথা সামনের দিকে নত করে দিয়ে বলে উঠেছিলেন “তাঁর কদম আমার মস্তকোপরি”। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে মুরীদানদিগকে তিনি জানান, “আজ থেকে তিনশত বছর পর এমন একজন অলী আল্লাহ দুনিয়ায় শুভাগমন করবেন, যিনি ঘোষনা দেবেন, ‘আমার চরণ সকল অলী আল্লাহর স্কন্ধোপরি’। সে সময় আমি পৃথিবীতে বেঁচে থাকবোনা বিধায় আগাম তাঁর সে ঘোষনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে গেলাম। একইভাবে হযরত জুনাঈদ বাগদাদীও (রহঃ) (জন্ম- ২২৮ হিজরী - ওফাত ২৭ই রজব-২৯৮ হিজরী) হযরত সায়্যিদিনা গাউসুল আযমের (রহঃ) সে ঘোষনার সম্মানে আগাম স্বীয় ম¯ককে অবনত করে দিয়েছিলেন। গাউসুল আযম স্বীকৃতি লাভঃ সর্বজনমান্য আলেমে দ্বীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বড়পীর হজরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানীকে (রহঃ) ‘গাউসদের গাউস’ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বিশ্বখ্যাত ‘আখবারুল আখয়ার’ গ্রন্থে তাঁকে ‘গাউসুল আযম’,‘গাউসুস সাকালাঈন’ বলে অভিহিত করে গাউসে পাককে (রহঃ) “কুন-ফায়াকুন” অর্থাৎ - হও বলতে হয়ে যাওয়ার ক্ষমতার অধিকারী বলে মšব্য করেছেন। শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভীও (রহঃ) (জন্ম ঃ ১১১৫ হিজরী-ওফাত ঃ ১১৭৬ হিজরী) তাঁকে ‘গাউসুল আযম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) (জন্ম ঃ ১২৩১ হিজরী-ওফাত ঃ ১৩১৫ হিজরী) ‘শামায়েলে এমদাদিয়া’ গ্রন্থে তাঁকে ‘গাউসুল আযম’ ও ‘দ্বীনের ডুবš জাহাজের উদ্ধারকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী ‘সিরাতুল মু¯াকিম’ গ্রন্থের ৩৭২ পৃষ্ঠায় তাঁকে ‘গাউসুস সাকালাঈন’ নামে অভিহিত করেছেন। মৌলভী খলীল আহমেদ আম্বেটবীর ‘বারাহীনে কাতেয়া’ গ্রন্থের ৯১ পৃষ্ঠায় তাঁকে ‘গাউসুল আযম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব বরেণ্য ও নেতৃস্থানীয় আলেমদের এ সকল উক্তিসমুহ গাউসুল আযম দ¯গীর বড়পীর হজরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর (রহঃ) গাউসিয়তের সার্বজনীনতা, ব্যাপকতা ও চিরšনতারই প্রমাণ বহন করে। কাদেরিয়া তরীকার প্রবর্তনঃ আরবী ত্বরীকা শব্দের অর্থ রাস্তা। ইসলামী পরিভাষায়, “সফীগন সাধকগণ যে রাস্তা ধরে আল্লাহ্-র নৈকট্য সন্ধান করেন, সেটাই ত্বরীকা বা ত্বরীকত নামে অভিহিত”। যুগে যুগে প্রসিদ্ধ শায়খ, গাউস ও কুতুবগণ এধরণের যেসব ত্বরীকা উম্মতে মুহাম্মদীকে উপহার দিয়েছেন তা ঐ সকল ত্বরীকাসমুহের প্রতিষ্ঠাতাদের নাম ও উপাধি অনুসারে পরিচিতি লাভ করেছে। মুসলিম সমাজে অনুসৃত এ সকল ত্বরীকার মধ্যে গাউসুল আযম দস্তগীর বড়পীর হজরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর (রহঃ) প্রবর্তিত ত্বরীকা তাঁর নামানসারে “কাদেরিয়া ত্বরীকা” নামে বিশ্বময় সুপরিচিত। সুলতানুল হিন্দ গরীব নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতীর (রহঃ) (জন্মঃ ৫৩৭ হিজরী-ওফাতঃ ৬২৭ হিজরী) ত্বরীকার নাম “চিশতিয়া ত্বরীকা”, হযরত শায়খ খাজা বাহাউদ্দিন ইবনে মাহমুদ বোখারী নক্সবন্দী (রহঃ) (জন্মঃ ৭১৭ হিজরী- ওফাতঃ ৭৯১ হিজরী) প্রবর্তিত ত্বরীকার নাম “নক্সবন্দীয়া ত্বরীকা”। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী ওরফে হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দির (রহঃ) (জন্মঃ ৯৭১ হিজরী-ওফাতঃ ১০৩৪ হিজরী) ত্বরীকার নাম হয়েছে “মুজাদ্দেদিয়া ত্বরীকা” এবং হযরত শায়খ সিহাবুদ্দিন সোহরাওর্য়াদীর (রহঃ) (জন্ম ঃ ৫৪৯ হিজরী-ওফাতঃ ৫৮৭ হিজরী) প্রবর্তিত ত্বরীকাটি “সোহরাওর্য়াদীয়া ত্বরীকা” নামে অভিহিত হয়েছে। উল্লেখ্য এ ত্বরীকাসমুহের সবকটিই সহীহ ত্বরীকা হিসেবে সারা মুসলিম জাহানে স্বীকৃত ও বহুল সমাদৃত। তবে এগুলোর মধ্যে “কাদেরিয়া ত্বরীকা”ই সর্বপ্রধান ত�
|