শিরোনাম: |
= কাদেরিয়া তরীকার পীর মাশাইখ পরিচিতি =
হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) 'র জীবন ও কর্ম
শাহ্জাহান মোহাম্মদ ইসমাঈল, তাহের হোছাইন
|
হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) সিলসিলা এ আলীয়া কাদেরিয়ার ৪৩ তম শায়েখ এবং গাউসে পাকের ২৬তম প্রতিনিধি। হযরত খাজা চৌহরভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর সুযোগ্য খালিফায়ে আযম হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বাংলাদেশ ও বার্মায় কাদেরীয়া তরীকার প্রসারে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের সময়ে (১৮৫৭খৃঃ) বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাযারা জেলার সিরিকোট নামক গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। এ গ্রামের পূর্ব নাম ‘শেতালু শরীফ’। বর্তমানে এটা তাঁর নামে ‘সৈয়্যদাবাদ শরীফ’ নামে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর বুযুর্গ পিতার নাম হযরত সৈয়্যদ সদর শাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। তিনি ছিলেন একজন উঁচুদরের অলি আল্লাহ এবং প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর ৩৮তম অধঃস্তন বংশধর। তাঁর পিতামহের নাম হযরত সৈয়্যদ খানী জামান শাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। তাঁর পুর্বপুরূষ হযরত গফুর শাহ ওরফে মারুফ কাপুর শাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর ২৫ তম অধঃস্তন বংশধর। তিনিই সর্বপ্রথম দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে সিরিকোট অঞ্চলে আগমন করেন এবং ধর্মযুদ্ধে বিজয়ী হন। তাই তাঁকে বলা হতো "ফতেহ সিরিকোট" বা ‘সিরিকোট বিজয়ী’। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) অত্যল্প বয়সে পবিত্র কুরআন শরীফ হিফজ করেন। অতঃপর স্বদেশে-বিদেশে দ্বীনি শিক্ষার বিভিন্ন সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন এবং উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন ৷ ১৮৮০ সালে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ‘ফাযিল’ সনদ লাভ করেন ৷ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর আর্দশ ছিল তাঁর স্বভাবজাত; তা তাঁর কর্মে অনায়সে ফুটে উঠত৷ তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে দক্ষিন আফ্রিকার কৃঞ্চাঙ্গ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকার মোম্বাসা (বর্তমানে কেপ টাউন) বন্দরে ১৯১১খৃঃ মুসলমানদের জন্য প্রথম জামে মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯১২ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)‘র শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। দীর্ঘদিন পীরের খেদমত করার পর ১৯২০ সালে পীরের নির্দেশে তিনি বার্মার রেঙ্গুন শহরে চলে যান। সেখানে তিনি দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ দ্বীন ইসলাম ও তরীকায়ে কাদেরিয়ার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি রেঙ্গুন ত্যাগ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। পরে চট্টগ্রামবাসী মুরীদানদের বিশেষ অনুরোধক্রমে তিনি বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আগমন করেন। তাঁর অনিঃশেষ প্রচেষ্টায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল ও ঢাকা জেলায় সুন্নীয়তের বিপুল বিস্তার ঘটে ও সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯২৫ সালে বার্মায় ‘আনজুমানে শুরায়ে রহমানিয়া’ নামে একটি দ্বীনি সংস্থা গঠিত হয়,যা বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম প্রাচীন স্বেচছাসেবামুলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রূপে চিহ্নিত। এটি ১৯৪৮ সালে “আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া” নামাঙ্কিত হয়ে বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও কল্যাণধর্মী স্বেচ্ছাসেবী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মরত আছে। আনজুমানের সক্রিয় সহযোগীতা ও হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর নেতৃত্বে ১৯৫৪ খৃষ্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও শ্রেষ্টতম সুন্নী শিক্ষায়তন হিসেবে জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাদেরিয়া তরীকার বিকাশ সাধনে তাঁর অবদান অসামান্য। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সুদুর প্রাচ্য, আফ্রিকা ও বার্মা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাঁর কর্মক্ষেত্র । ১৯৪৫ ও ১৯৫৮ সনে তিনি পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। ১৯৬১ সালে মুতাবিক ১৩৮০ হিজরীর ১১ই জ্বিলকদ রোজ বৃহস্ততিবার দিবাগত রাতে প্রায় শতাধিক বৎসর বয়সে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের হাযারা জেলার সিরিকোট শরীফে তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত। |