নবী কারীমﷺ এঁর প্রতি ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ এঁর নজীরবিহীন ভালোবাসা ও কতিপয় প্রশ্নঃ প্রেক্ষিত মীলাদুন্নবী ﷺ
মাহমুদ হাছান
|
![]() মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করলে বিরোধীরা (বেদ'আতীরা) বলে, "সাহাবায়ে কেরাম তোমাদের ন্যায় মীলাদুন্নবী পালন করেন নাই। তোমরা কি তাদের থেকে বেশী আল্লাহর রাসুলকে ভালোবাস?" জবাবে উলটো একটি প্রশ্ন তাদেরকে করা যেতে পারে, জী না, আমরা সাহাবায়ে কেরাম থেকে বেশী পরিমাণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার দাবি করিনা। কিন্তু একটি কথার জবাব দেন দেখি, ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ ( মালিকী মাযহাবের ইমাম) মদীনা শরীফে কখনো জুতা পায়ে হাঁটতেন না। বলতেন, যে মাটিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাম করছেন, সে মাটির উপর কীভাবে আমি জুতা পায়ে হাঁটি? (অন্য বর্ণনা মতে, তিনি ঘোড়ায় চড়তেন না।) [সূত্রঃ ইমাম কাজী আয়াজ আল মালেকী রহিমাহুল্লহ্ কৃত কিতাব আশ্ শিফা বি তা'রিফ আল ‘হুকুক আল- মুস্তাফা, খ., ২, পৃৃষ্ঠা ৬৩।] বলুন তো, ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ এ কর্মের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যে সম্মান আর মুহাব্বাত প্রদর্শন করলেন, কই, এমন সম্মান আর ভালবাসার নজীর তো সাহাবায়ে কেরামের জীবনীতে পাওয়া যায় না? (আমি পাইনি, আপনারা কেউ পেলে আমাকে জানাবেন।) কই, ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ এঁর এ কাজকে তো আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করে বেদ'আতী বলে আখ্যায়িত করলো না। তো ইমাম মালিকের এমন ভালোবাসা আর মুহাব্বাত যদি প্রশ্নের উর্ধ্বে থাকতে পারে, তবে মীলাদুন্নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের মাধ্যমে ভালোবাসা আর সম্মান প্রদর্শন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কেন? বলুনতো এই ধরণের তা'যীম কি সাহাবাগণ থেকে কখনো প্রমাণিত? ১. মিরকাত ও আশআতুল লুমআত এর ভূমিকায় ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহু এর জীবনী প্রসংগে লিখা আছে, ইমাম মালিক কখনো মাদীনা শরীফের মাটিতে ঘোড়ায় আরোহণ করেননি। যখন হাদীস বর্ণনা করতেন, এর আগে গোসল করে নিতেন। ভালো কাপড় পরিধান করে নিতেন। সুগন্ধি লাগাতেন। ভীতি ও গাম্ভীর্য সহকারে বসতেন। ২. তাফসীরে রুহুল বয়ানে রয়েছে, সুলতান মাহমুদ এর প্রিয় গোলাম ছিলেন আয়ায। আয়াযের ছেলের নাম ছিলো মুহাম্মদ। সুলতান মাহমুদ তার নাম ধরে ডাকতেন। একদিন সুলতান মাহমুদ গোসল খানায় গিয়ে ডাক দিলেন "হে আয়াযের ছেলে, পানি নিয়ে এসো"। আয়ায শুনে আরজ করলেন, হুযুর কি অপরাধ হলো ছেলের যে নাম নিলেন না? সুলতান মাহমুদ বললেন, ও সময় আমি অযুহীন ছিলাম; আর অযুহীন অবস্থায় আমি পবিত্র 'মুহাম্মদ' নাম কখনো উচ্চারণ করি না। ইমাম মালিক আর সুলতান মাহমুদ এঁর মুহাব্বত কি সাহাবায়ে কিরাম থেকে বেশি ছিলো? নবীজির প্রতি উনাদের এমন তা'যীমের কি কোন প্রমাণ রয়েছে? নেই, তবুও উনারা করেছেন। কারণ, কারো প্রতি তা'যীমের জন্য সবর্দা প্রমাণের দরকার হয়না। ঠিক তেমনি, মীলাদ শরীফে আমরা নবীজির তা'যীমে কিয়াম করি আর এমন তা'যীম সাহাবাগণ থেকে প্রমাণিত হতেই হবে তা শর্ত নয়। দেখুন, দেওবন্দীদের সর্বগুরু আশ্রাফ আলী থানবী বলেছেন, ‘যে কাজে লাভের চেয়ে ক্ষতির দিক প্রবল সেক্ষেত্রে মূলনীতি হল কাজটি যদি শরীয়তে ‘কাম্য ও করণীয়’ পর্যায়ের না হয় তাহলে মূল কাজটি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে যদি ‘কাম্য ও করণীয়’ হয় তাহলে মূল কাজটি নিষিদ্ধ করা হয় না, ক্ষতির দিকগুলি বন্ধ করা হয়।’ [সূত্রঃ ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৪।] ইবনু তাইমিয়ার একটি কথাতো এরুপ যে, তা কোন কোন ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত না হলেও সওয়াব পাওয়া যাবে; সেটি হলো, من كان له نية صالحة اثيب علي نيته وان كان الفعل الذي فعله ليس بمشروع- اذا لم يتعمد مخالفة الشرع- অর্থাৎ নিয়ত ঠিক থাকলে আর শরীয়তের বিরোধিতা করার ইচ্ছা না থাকলে সে যে কাজ করছে, তা যদি শরীয়ত সম্মত নাও হয়, তবুও সে ছওয়াব পাবে। [সূত্রঃ ইবনে তাইমিয়া : ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।] এখন বলুন, ইবনু তাইমিয়ার এ কথা দ্বারা আমাদের সমাজে প্রচলিত কী কী শরীয়তবিরোধী কাজে উৎসাহ দেয়া হল?
|